বর্দ্ধমানের
রাজসভাতেও এক ভাঁড় ছিল। নাম তার নেপাল। সে সকলের কাছে বলত-গোপালের চাইতে
তার বুদ্ধি অনেকবেশি, গোপালকে একবার সামনে পেলে সে তাকে বোকা বানিয়ে দিতে
পারে কি না পারে, দেখা যাবে একবার।
দৈবক্রমে একসময়ে গোপাল মহারাজের দরবার
থেকে বর্দ্ধমান রাজসভায় গিয়ে উপস্থিত।
বর্দ্ধমান রাজ যখন শুনলেন
গোপাল এসেছে, তখন তিনি খুশি হয়ে বললেন,তুমি এসেছ, বড় ভাল হয়েছে। আমার ভাঁড়টি
সর্বদাই তোমার সঙ্গে প্রতিযোগীতা করবার ইচ্ছা প্রকাশকরে
থাকে। এবার প্রমাণ হবে- সে বড়,না তুমি বড়। প্রতিযোগীতায় তুমি আমার-ভাঁড়কে
হারাকে পারলে আশাতীত পুরষ্কার পাবে। নেপালের সঙ্গে উঠতে পার কিনা দেখি।
সে জিতলে সেওপাবে।
গোপাল ঈষৎ হেসে বললে, হুকুম করুন,কি করতে হবে।
রাজা বিচারের ভার দিলেন মহামন্ত্রীর উপর।
গোপাল ঈষৎ হেসে বললে, হুকুম করুন,কি করতে হবে।
রাজা বিচারের ভার দিলেন মহামন্ত্রীর উপর।
বিজ্ঞ মহামন্ত্রী গোপাল
এবংবর্দ্ধমানের ভাঁড় নেপাল দুজনকে ডেকেবললেন, তোমরা প্রত্যেকেই তিনজন
করে লোক
সংগ্রহ করবে ও তাদের কাল সকালে রাজসভায় হাজির করবে। ওই তিনজনের ভিতর
একজন হবে এদরিয়ার, একজন হবে ওপারের, আর একজন মাঝদরিয়ার লোক।
যে আজ্ঞে। বলে গোপাল এবংবর্দ্ধমানের ভাঁড় নেপাল দুজনেইবিদায় নিলে।
নেপাল ভাবল এবার আমি গোপালকে ঠকাবইঠকাব, সে মুচকি হেসে নাচতে নাচতে বিদায় নিল। নেপাল পরদিন ভোরে নদীরঘাটে গেল। সেখানে দাঁড়িয়ে নদীর এপার থেকে একজন, নদীর ওপার থেকে একজনএবং মাঝনদীর নৌকার উপরে থেকে একজন লোককে ডেকে আনলে রাজার নাম করে এবং তাদের সভায় এনে হাজির করলে। তিন জন লোকত ভয়ে অস্থির। আমরা কোন দোষকরিনি বাবু, আমাদের কেন রাজসভায়নিয়ে এলেন। আমাদের কি দোষ ধরে নিয়ে এলো?
গোপালও যথাসময়ে রাজসভায় এসে হাজিরহলো, তারও সঙ্গে তিনজন লোক,
একজন তার ভিতর ভট্টচার্য ঠাকুর, একজন সন্ন্যাসী, একজন নারী। তাদের নিয়ে সে সভার
একপাশে চুপ করে বসে রইল।
বর্দ্ধমানের ভাঁড় নেপাল রাজা ও মন্ত্রীকে সন্বোধন করে
বললে, হুকুম মত আমি এইতিনজন লোককে এনে হাজির করেছি।প্রথম লোকটি ছিল নদীর
এপারে,দ্বিতীয় লোকটি ছিল নদীর ওপারে, এইতৃতীয় লোকটি মাঝ নদীতে নৌকার
ওপরেছিল। যদি বিশ্বাস না হয় এদেরকেজিজ্ঞসা করে দেখুন আমি সত্যি বলছি,না
মিথ্যা বলছি ওরাই সে কথা বলবে।
তারপর গোপালকে বলা হল, সে যাদের এনেছে
তাদেরকে সামনে উপস্থিত করারজন্য। গোপাল জানাল এদেরকে বহুকষ্টে অনুনয় বিনয়
করে রাজসভায় উপস্থিত সে করেছে। কেউই প্রথমে রাজসভায় আসতে চায়নি। বিশেষ করে
সন্ন্যাসী ঠাকুর কোনমতেই রাজসভায় আসতে নারাজ ছিলো। পরে গোপালের কথাবর্তায় সন্তুষ্ট
হয়ে উনি রাজি হয়েছেন।
পরিচয় দেবার জন্যে গোপাল করজোড়ে নিবেদন করলেন,
মহান মহারাজ। মহামান্য মহামন্ত্রী এবংসভাসদগণ। এই যে তিনজনকে আমি
রাজসভায়নিয়ে এসেছি, এরা কেউ আজ দরিয়া বা নদীর দিকে যান নি। কারণ আমার
মনে হয়নি যে সুবিজ্ঞ মহামন্ত্রী দরিয়া বা নদী অর্থে বলতে সামনের
গঙ্গানদীবুঝিয়েছেন। আমি অন্তত মহামন্ত্রীর নদী অর্থে এখানে বুঝেছি ভব-নদী। আমার অনুমান অভ্রান্ত মনে করে তাই এপার ওপার ও মধ্যস্থানের এক একটিলোক
এনে রাজসভায় বহুকষ্টে হাজিরকরেছি
…. এই যে ভট্চাজ্ ঠাকুর ইনি চাইছেন কি করে
দেশে এর পান্ডিত্যেরখ্যাতি দিনদিন ছড়িয়ে পড়বে, কি করেবেশ দুপয়সা উপার্জ্জন
হবে, কি করে যশে মানে ধনে ইনি দেশও দশের ভিতরে একজন মহামান্য হয়ে উঠতে
পারবেন। সম্পূর্ণভাবে ইহকাল নিয়েই ইনি ব্যস্ত আছেন। এক কথায় বলা যায় ইনি এ
পারের লোক। এ পারের লোক এধরণের ছাড়া আমার অন্য কাউকে মনে হয়না।
….. আর এই
যে সন্ন্যাসী ঠাকুর,ইনি ইহকাল নিয়ে মাথা ঘামান। সর্বদাই ভগবানের
ধ্যানে-বিভোর কি করে ভগবান দর্শন করবেন সেই নিয়ে তন্ময়, খেতে দিন খাবে, খেতে
না দিন খাবে না, সুতরাং এদেরকেই বলা যায়, ও পারের লোক।
….আর এই যে, তৃতীয়টি,
ও হল এই নগরের একটি বেশ্যা। বেশ্যা হইকালের কথাওভাবে না, পরকালের কথাও ভাবে
না। সেইহকাল-পরকাল বলতে কিছুই বোঝে না। সে এপারের লোকও নয়, ওপারের লোকওনয়।
অর্থাৎ সে মাঝ নদির লোক। এই আমার তিনজন লোকের পরিচয়। মহামন্ত্রীর আদেশমত কাজ
করতে পেরেছি কিনা, এইবার সভাতা যাচাই করুন। আমার আর এর বেশি কিছুই বলার নেই।
আপনারাসকলেই ভেবে বিচার করে দেখুন। ঠিকহয়েছে কিনা। সেটা আপনাদের উপর
ছেড়েদিলাম।
সভায় ধন্য ধন্য রব উঠল। রাজা, মহামন্ত্রী বললেন, গোপালের মতবুদ্ধিমান লোক খুবই সমাজে দুর্লভ। নেপালেরও অহঙ্কার সেদিন থেকে দূরে গেল। রাজা এবার গোপালকে প্রচুর পুরষ্কার সহ বিদায় দিলেন। গোপালশুধু সুরদিক ভাঁড় নয়, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মহাপন্ডিতও বটে- দিকেদিকে তার এই গুনের কাহিনী ঘোষিতহল। কৃষ্ণনগরে মহারাজ ও গোপালের এইকাহিনীগুলোর গুনের কদর করতে ভুললেননা। সেদিন থেকে নেপাল গোপালেরবন্ধু হয়ে গেল।
সভায় ধন্য ধন্য রব উঠল। রাজা, মহামন্ত্রী বললেন, গোপালের মতবুদ্ধিমান লোক খুবই সমাজে দুর্লভ। নেপালেরও অহঙ্কার সেদিন থেকে দূরে গেল। রাজা এবার গোপালকে প্রচুর পুরষ্কার সহ বিদায় দিলেন। গোপালশুধু সুরদিক ভাঁড় নয়, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মহাপন্ডিতও বটে- দিকেদিকে তার এই গুনের কাহিনী ঘোষিতহল। কৃষ্ণনগরে মহারাজ ও গোপালের এইকাহিনীগুলোর গুনের কদর করতে ভুললেননা। সেদিন থেকে নেপাল গোপালেরবন্ধু হয়ে গেল।
Post a Comment
Post a Comment